নরসিংদীর রায়পুরা নিলক্ষ্যা বীরগাঁওয়ের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ (৭০) বলেন, দেশকে শত্রু মুক্ত করতে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে ও পরিপূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন করতে পারিনি।
মহান স্বাধীনতার স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলার রাখাল রাজা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে জীবন বাজি রেখে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি মাতৃভূমিকে শত্রু মুক্ত করতে।
স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, মা-বাবা সবার মায়া ত্যাগ করে দেশকে মুক্ত করতে চলে গেছি যুদ্ধ করতে। ৩ নং সেক্টরে, অম্পিনগরে কমান্ডার আবদুল ছাত্তার সাহেবের অধীনে আমরা যুদ্ধ করেছি। আমার ডান পায়ে হাঁটুর নিচে গুলি লেগেছিল। আমার সহযোদ্ধা একজন মারা গেছে। দিনের পর দিন না খেয়ে অর্ধাহারে অনাহারে থেকেছি।
পরিবার-পরিজনের কথা মনে করে কেঁদেছি অনেক। কিন্তু সব কিছুর ওপর দেশের কথা, দেশের মানুষের কথা ভেবেছি সর্বক্ষণ! আমি যুদ্ধের শুরুতেই, আমার বাড়ি নিলক্ষ্যা বীরগাঁও, রায়পুরা, নরসিংদী থেকে যোগদান করি। আমার মা-বাবা আমাকে যুদ্ধে যেতে আদেশ করলে, আমি স্ত্রী, পুত্র-কন্যার মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধে শত্রুর বিপক্ষে ঝাঁপিয়ে পড়ি। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর আহত অবস্থায় বাড়ি ফিরি।
এখন আমি একটা সিএনজি স্টেশনে লাইনম্যানের কাজ করি। আমার চার ছেলে, এক মেয়ে। ছেলেরা বেকার হিসেবে জীবনযাপন করতেছে। কোনো রকম কষ্টে জীবনযাপন করতেছি। সরকার আমাকে মাসিক ১২ হাজার টাকা করে সম্মানী প্রদান করে তাই দিয়ে কোনো রকম দিনাতিপাত করছি।
মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আপনার চাওয়া পাওয়া কী? জবাবে তিনি বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এটা দেখে ভালো লাগছে। দুর্নীতি দূর হোক, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক, দেশের মানুষ সুখে-শান্তিতে থাক এটাই আমার চাওয়া। তবে আমরা আজও বঙ্গবন্ধুর ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়তে পারিনি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে আমরা বদ্ধপরিকর।
নিজের জন্য কিছু চান কি না? জানতে চাইলে বলেন, আমার চার শতাংশের বাড়িতে ছোট্ট একটা টিনের দুচালা ঘরে ছেলে-নাতি-নাতনিদের নিয়ে থাকি। মানবেতর জীবনযাপন করছি। সরকার যদি কোনোভাবে সহায়তা করে তবে হয়তো বাকিটা জীবন একটু শান্তিতে কাটাতে পারব। উপস্থিত জনগণও মুক্তিযোদ্ধার দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে লিখতে সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন।
আপনার শেষ কথা কী? জবাবে বলেন, রাজাকারদের বিচার দেখে যেতে পারছি, দেশ আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নতির শিখরে আরোহণ করছে। সকল মানুষ স্বাধীনতার সুফল ভোগ করে জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে বিশ্ব দরবারে নেতৃত্ব দিবে মহান বিজয় দিবসে এটাই আমার প্রত্যাশা।
সূত্র : অধিকার নিউজ